
15 Mar কাটাঘুড়ি ১১.০৩.২০২১
সোনায় মোড়ানো দিননামচা
মেরিল-প্রথম আলো পাঠক জরিপ পুরস্কার প্রথমবার পাওয়ার পরে জীবন এর রেখাচিত্র বদলে গেলো।অনেক সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বরাবরের মতই আমার জীবনসঙ্গী উল্টো সাংবাদিকের ইন্টারভিউ নিয়ে তারপর আমার সামনে বসান আমাকে প্রশ্ন করার জন্য। আমার বাসায় এমনই নিয়ম।একবার একজন সাংবাদিক এসেছিলেন। খুব নিরবে নরম করে আমার চোখে চোখ রেখে ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন এবং দুই মিনিট পরই কথার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন।এক সময় উনি কি যেন আবছা করে প্রশ্ন করলেন যার
রোজীনা মুস্তারীন টুশি
একটা বাক্যও আমার বোধগম্য হচ্ছিলো না এবং আমার মনে হচ্ছিলো উনি জ্ঞান হারাচ্ছেন।
আমি এক্সকিউজ মি বলে ভেতরে এসে আমার হাজব্যান্ড কে একটু দ্বিধান্বিত অবস্থায় বললাম ইন্টারভিউ দিবো কি, উনি কি প্রশ্ন করছেন বুঝতেই পারছিনা আর উনার দৃষ্টি ও অদ্ভুত! আমার হাজব্যান্ড চটজলদি বসার ঘরে গেলেন এবং যথারীতি সাংবাদিককে পাওয়া গেলো না। বোঝাই গেলো উনি আমার সামনাসামনি বসার মতলব নিয়ে সাংবাদিক হয়ে এসেছিলেন। এরপর আমার হাজব্যান্ড একজন প্রথিতযশা সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেছিলেন কে সাংবাদিক আর কে সাংবাদিক না তা কিভাবে টের পাবো।তখন উনি একটা আইডেন্টিটি কার্ড দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে এই জায়গায় একটা প্রেসক্লাবের সিরিয়াল নাম্বার থাকবে, এবং তাতেই বোঝা যাবে সে সত্যিই এনলিশটেড সাংবাদিক। এরপর থেকে আমার ইন্টারভিউ নিতে এলে সাংবাদিকের আইডেন্টিটি কার্ড দেখে আমার সামনে বসে থাকতেন আমার হাজব্যান্ড। এতে পুরো সাংবাদিক পাড়ায় রটে গেলো কনকচাঁপার হাজব্যান্ড সাংবাদিকদের ইন্টারভিউ তো নেয়ই আবার সামনে বসে থেকে নিজেই ইন্টারভিউ দেয়।এগুলো কথায় আমার, আমাদের কখনও কিছু যায় আসে নাই।
আমার কাজ গান গাওয়া। সাংবাদিকদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি না করলেই হলো, এছাড়া তাদের নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নাই।যাইহোক। জাতীয় দৈনিক গুলো এগুলো সমস্যা এড়াতে আমার কাছে মহিলা সাংবাদিক পাঠাতেন। তারা আসলে কখনোই আমার অভিযোগ গভীর ভাবে অনুধাবন করেন নাই। মেরিল প্রথম আলো পাঠক জরিপের পুরস্কার প্রাপ্ত আমার সারাদিনের গল্প লেখার জন্য সারাদিন জন্য এলো আমার কাছে এক সাংবাদিক সংবাদ প্রতিনিধি রোজীনা মুস্তারীন টুশি। একদম সকালে এসে হাজির হলো। এসে বসলো আপা, আপনি আপনার মতো সারাদিন কাটান।আমি শুধু হাওয়ায় মতো আপনার পাশে সারাদিন থাকবো।আমার আজকের অ্যাসাইনমেন্ট এটাই।আমি ওর সামনে চা নাস্তা দিয়ে আমার রেয়াজের রুমে ঢুকলাম। আধাঘন্টা খানেক রেয়াজের পরে ওর সঙ্গে বসলাম ড্রইংরুমে। ও বিস্মিত। বলে আপা! পিওর ক্লাসিকাল দিয়ে আপনি রেয়াজ করেন! হারমোনিয়াম শুনলাম না! আমি বললাম হারমোনিয়াম না তো আমি ইলেক্ট্রিক সারং বা ডিজিটাল তানপুরায় রেয়াজ করছিলাম।
বললো আপা আপনার দম এতো লম্বা আপনি প্রানায়ান করেন? বললাম মাঝেমধ্যে করি,ও বললো আমাকে শেখাবেন? আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে।আমি বললাম কেন নয়? নিশ্চয়ই একদিন শেখাবো।এরপর আমি রাঁধতে চলে গেলাম। ও আমার রান্নাঘরের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আর প্রশ্ন করছে।আপা,এই রান্না অকেশনাল না রেগুলার? বললাম রেগুলারই বলা যায়।বলে কিভাবে পারেন! এই তরকারিটা আমার মা এভাবেই রাঁধেন। দুপুরে খাওয়ার পরে আনুষ্ঠানিক ইন্টারভিউ নিতে বসলো। প্রথম প্রশ্ন এই যে দু’জন বড় বড় মাইলপোস্ট এর মতো কঠিন শিল্পী থাকা সত্বেও আপনি বানের পানির মতো সব ভাসিয়ে জায়গা করে নিলেন, আপনার অনুভূতি কি? আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম আমি বানের পানির মতো ভাসাইনি,বানের পানিতে ভেসেও আসিনি ভাসাতেও আসিনি।আমি কনকচাঁপা। আমি আমার জায়গায় আমার নিজস্ব পরিচয়ে নিজের জায়গা দখল করতে এসেছি। আগে পিছে যারা আছেন সবাই শ্রদ্ধেয় কিন্তু আমি আমাকে তৈরি করে নিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়েই এখানে এসেছি কিন্তু কোন ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখাতে নয়।আমি কাজ করতে এসেছি গভীর মনোযোগ দিয়ে এবং অবশ্যই কাউকে অনুকরণ করে নয় আমি এসেছি আমার নিজস্বতা নিয়ে। টুশি বললো আমার ফর্মাল প্রশ্নোত্তর এখানেই শেষ।
এখন শুধুই আপনার দিননামচা টুকবো। এরপর বিকেলে একটা শ্যুটিং ছিলো একুশে টিভির ঈদের বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান এ আমার একক অংশগ্রহণ। আমি নিজে মেক আপ নিচ্ছিলাম, টুশি অবাক হচ্ছিলো, আমি এক শাড়ি পরে পাঁচটা গান লিপস করলাম, টুশি আবারও অবাক। শ্যুটিং শেষ করে সে আমাদের গাড়িতে ফিরতে ফিরতে বলছিলো আমি বিস্মিত যে একজন হয়ে ওঠে তারকার দিননামচা এতো সাধারণ! ফার্মগেটের কাছে সে বিস্মিত দৃষ্টি উপহার দিয়ে নেমে গেলো।তার পরের বৃহস্পতিবারই খুব সুন্দর একটা ইন্টারভিউ বেরুলো। মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো, মৌখিক দাওয়াত ও পেয়েছিলাম। বিয়ের আগে পরীক্ষা।পরীক্ষার পড়া পড়তে ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে রিভাইজ করতে গিয়ে আনমনা অবস্থায় ছাদ পড়ে গিয়ে মেয়েটি মারা যায়। এই কথাগুলো ভাবলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
কার্টেসি: প্রাণের বাংলা